সুনামগঞ্জের ঐতিহাসিক ও পরিবেশগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ টাঙ্গুয়ার হাওরকে পরিবেশগত বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হাউজবোটের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণসহ ছয় দফা দাবি জানিয়েছে হাওর অঞ্চলবাসী। বুধবার (১৮ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এ দাবি তুলে ধরা হয়।

‘হাওর অঞ্চলবাসী’ ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক ড. হালিম দাদ খান বলেন, “টাঙ্গুয়ার হাওর একটি আন্তর্জাতিক রামসার সাইট এবং দেশের অন্যতম জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ অঞ্চল। কিন্তু অপরিকল্পিত, অনিয়ন্ত্রিত ও অস্থির পর্যটন ব্যবসার কারণে এই হাওরের স্বাভাবিক পরিবেশ ধ্বংসের মুখে পড়েছে।”

তিনি আরও জানান, বর্তমানে হাওরে প্রায় ২০০ হাউজবোটে হাজার হাজার পর্যটক যত্রতত্র ভ্রমণ ও রাত্রিযাপন করছে। তাদের সঙ্গে আসা পলিথিন, প্লাস্টিক, বোতলসহ অন্যান্য বর্জ্য হাওরের স্বচ্ছ পানিকে দূষিত করছে। এতে মাছ মারা যাচ্ছে, কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে, এবং উচ্চ শব্দ, রাতের আলো ও উদ্দাম নৃত্যের কারণে পাখি ও জলজ প্রাণীদের জীবনহানি ঘটছে।

ড. হালিম দাদ খান ২০১৮ সালের একটি জরিপের তথ্য তুলে ধরে জানান, সে সময় হাওরে জলচর পাখির সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০ হাজার, যা এখন নেমে এসেছে ২৩ হাজারে। একইভাবে মাছের পরিমাণও আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

মানববন্ধনে হাওরবাসীরা ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করেন—
1. হাউজবোটের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত শর্ত অনুযায়ী পরিচালনার ব্যবস্থা গ্রহণ।
2. পর্যটন সংশ্লিষ্ট বর্জ্য (পলিথিন, প্লাস্টিক, বোতল ইত্যাদি) সংগ্রহ করে নির্ধারিত স্থানে ফেলা বা পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করা।
3. সরকারি উদ্যোগে পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনা নীতিমালা তৈরি ও প্রচার।
4. মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ, জেলা প্রশাসনের সহায়তায় পর্যটন ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন।
5. মানুষের চলাচল, শব্দ, আলো ইত্যাদির নিয়ন্ত্রণ যেন পাখি, মাছ ও জলজ প্রাণীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে, এমন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
6. জেলা প্রশাসনের নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থা চালু রাখা।

মানববন্ধনে হাওর অঞ্চলের অন্যান্য বাসিন্দারাও উপস্থিত ছিলেন এবং একযোগে টাঙ্গুয়ার হাওরের সুরক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version