সৌদি আরব ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক লক্ষ্যগুলোর অন্যতম। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্য সফর এবং সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের বিশাল নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা চুক্তি ঘোষণায় ইসরায়েলের নাম অনুপস্থিত ছিল। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এটি শুধু কাকতালীয় নয়, বরং এটি ট্রাম্প প্রশাসনের কৌশলগত বার্তা বহন করছে।
ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, তারা সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা সহযোগিতাকে ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো শর্ত ছাড়াই এগিয়ে নিতে চায়। অ্যারাব গালফ স্টেট ইনস্টিটিউটের অনাবাসিক ফেলো আনা জ্যাকবস মনে করেন, এটি গাজাসহ অঞ্চলে ইসরায়েলি সামরিক আগ্রাসনের প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান হতাশার প্রকাশ। বিশেষ করে গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিয়ে ইসরায়েলের অনড় অবস্থানের ফলে এই সময়টি সৌদি-ইসরায়েল চুক্তির জন্য অনুকূল নয়।
বেকার ইনস্টিটিউটের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক ক্রিশ্চিয়ান কোটস উলরিশসেনও বলেন, হোয়াইট হাউস অবশেষে স্বীকার করেছে যে, সৌদি-ইসরায়েল স্বাভাবিকীকরণ এখন সম্ভব নয়। বাইডেন প্রশাসনের জোর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যুদ্ধের আবহে কোনো সমঝোতা এগোয়নি। বাইডেন দাবি করেছিলেন, হামাস ইসরায়েলে ২০২৩ সালের হামলা চালিয়ে সৌদি-ইসরায়েল চুক্তি বানচাল করেছে। যদিও এই দাবির পক্ষে সুস্পষ্ট প্রমাণ উপস্থাপিত হয়নি।
ট্রাম্প প্রশাসনের বর্তমান উদ্যোগ মূলত সৌদি আরবের সঙ্গে মার্কিন নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা গভীর করা। ঘোষিত চুক্তির আওতায় সৌদি আরবকে সর্বাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম, প্রশিক্ষণ ও সামরিক পরিষেবা সরবরাহ করবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই সহযোগিতা ন্যাটোর মতো পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির সমতুল্য নয়, তাই একে ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তির বিকল্প হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না।বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের উগ্র জাতীয়তাবাদী সরকারের কারণে সৌদি আরবের পক্ষে এখন স্বাভাবিকীকরণ নিয়ে এগোনো কঠিন। ট্রাম্প প্রশাসনও বুঝতে পেরেছে, এই পরিস্থিতিতে তাদের মূল লক্ষ্য রিয়াদের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা। ইসরায়েল আপাতত এই সমীকরণে উপেক্ষিতই থাকছে।